-তুমি এতোটা বদলে গেছো
কেনো? আমার থেকে
এতোটা দুরত্বই বা
বাড়াচ্ছো কেনো? আমার
দোষটাতো বলবা।
-প্লিজ শম্মী। চলে যাও। এখন
আর তোমার কথা ভালো
লাগে না। প্লিজ আর কখনো
আমার কাছে এসো না ।
-হঠাত কেন এমন করতেছো।
আমি তোমায় ছেরে চলে
গেলে আমায় মিস করবা না?
-না ।
-যখন ফুচকা খাবা তখন আমার
কথা মনে পরবে না?
-না। নতুন কাউকে নিয়ে
খাবো।
-ফুল দেখলে আমার কথা মনে
পরবে না?
-নাহ। হয়তো নতুন কেউ
থাকবে।
-আকাশের দিকে তাকালে
আমার কথা মনে পরবে না?
-নাহ। হয়তো নতুন কাউকে
পাবো আকাশ দেখার জন্য।
প্লিজ আমি সত্যিই আর
তোমার সাথে থাকতে চাই
না। মুক্তি দাও আমায়।
.
.
আকাশের মুখে এইরকম কথা
শুনে শম্মী পুরোই নির্বাক
হয়ে যায়। হঠাত এই
কয়েকদিনে একটা ছেলে
কিভাবে বদলে যেতে পারে
এতোটা । কারনটা জানা
নেই তারো। কথা হচ্ছিলো
আকাশ আর শম্মীর মধ্যে
একটা পার্কে। কথাগুলো
হয়তো একটা সম্পর্কের ইতির
মানেই করে। তবে শম্মীই
একটু বেশি কষ্ট পেলো।
কাঁদতে কাঁদতে আকাশকে
ছেরে বাসায় চলে যাচ্ছে
শম্মী। মাথায় পুরনো
আকাশের কথাই ঘুরছে তার।
ছেলেটা কতটাই না পাগল
ছিলো শম্মীর জন্য। শম্মী
ফিরে যায় ২ বছর আগে।
.
.
যখন শম্মী শুধুমাত্র ক্লাস ১০এ
পড়তো । রোজ একটা ছেলে
থাকে অনুসরন করতো। শম্মী
যেখানেই যেতো সকাল
থেকে বিকাল পর্যন্ত সে সব
জায়গায়ই ছেলেটাকে
দেখতো। শম্মী প্রায়
বিরক্তই হয়ে পরেছিলো
ছেলেটার উপর। যদিও
ছেলেটা কখনো শম্মীর
মুখোমুখি হয়নি। শম্মী
রাস্তায় হাটার সময় অনেক
অস:স্তী অনুভব করতো
ছেলেটার জন্য। এইভাবে
কোন ছেলে কোন মেয়েকে
সারাদিন অনুসরন করতে
পারে এটা জানা ছিলো না
শম্মীর। ছেলেটারকি আর
কোন কাজ নেই। শম্মীর
অপছন্দের লোকদের মধ্যে
সবচেয়ে শীর্ষেই ছিলো
ছেলেটা। তবে কয়েকদিন পর
কিছুটা ভালোও লাগতে শুরু
করে শম্মীর।
.
মনে পড়ে সেই দিনটার কথা।
রোজ সকালে স্কুল জাওয়ার
সময় একটা কুকুর তার পিছু
নিতো। শম্মী কুকুর খুব ভয়
পায়। তাই কুকুরের ভয়ে
রাস্তায় অনেক ভয়ে ভয়ে
চলতো সে। তবে একদিন স্কুল
জাওয়ার সময় কুকুরটাকে আর
দেখতে পায় না সে। হঠাত
দুরে তাকিয়ে দেখে কে
যেনো কুকুরটাকে শিকল
দিয়ে একটা গাছের সাথে
আটকে রেখেছে। শম্মীর
বুঝতে বাকি রইলো না
কাজটা হয়তো ঐ ছেলেটার
যে তাকে রোজ অনুসরন করে।
সেইদিন মনের এক কোনে একটু
জায়গা তৈরী হয় ছেলেটার
জন্য।
.
আরেক দিনের কথা। বিকেল
বেলা কোচিং শেষ করে
ফেরার পথে রাস্তায় কিছু
ছেলে শম্মীকে বেশ বিরক্ত
করছিলো। শম্মী অনেক ভয়
পায় সেদিন। পরেরদিন
ভাবে আজ কোচিং এ গেলে
যদি সেই ছেলেগুলো আবার
বিরক্ত করে। তবে বাসায়ও
কিছু বলার সাহস পায়নি।
তাই সাহস করে কোচিংএ
চলেই যায়। তবে আজ সেই
ছেলেগুলোর চেহারা দেখে
পুরাই অবাক শম্মী। সব গুলোর
হাতে আর কপালে
ব্যান্ডেজ। হয়তো কেউ
অনেক মেরেছে। শম্মীকে
দেখেই আজ অনেক দুরে চলে
গেছে। শম্মী প্রথমে কিছুই
বূঝতে পারে না। পরে বুঝতে
পারে হয়তো সেই অচেনা
ছেলেটারই কাজ এটা।
ছেলেটাকি পাগল নাকি।
এতোদিন ধরে তাকে অনুসরন
করছে। কুকুরকে গাছে বেধে
রাখছে, বখাটে ছেলেদের
পেটাচ্ছে শম্মীর জন্য। তবে
সামনে এসে কখনো কিছু বলে
না সে। সেই অচেনা পাগল
ছেলেটা আর কেউ না
আজকের আকাশই সেই
ছেলেটা। এই ভেবেই আরো
কষ্ট
পায় শম্মী।
.
কেন এতো বদলে গেলো
আকাশ। যে ছেলেটা আগে
সারাদিন শম্মী বলতেই
পাগল ছিলো। সে আজ কিনা
শম্মীর কাছ থেকে মুক্তি
চায়। বাসায় পৌছেই
আকাশের সাথে তোলা সব
ছবি হাতে নিয়ে আগুনে
পুড়াতে থাকে শম্মী। আর
আবার ফিরে যায় সেই
অতীতে। সেই অতীতের
আকাশের কাছে।
.
শম্মী তখন আকাশের নামও
জানতো না। তবে তার এই
পাগলামীগুলো দেখেই
ভালোবাসে তাকে।
.
সেইদিনটাকে শম্মী
কিভাবে ভুলবে! যেদিন
প্রথম আকাশ তার সামনে
এসে বলেছিলো
'ভালোবাসি তোমায়, রোজ
সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত
অনুসরন করি তোমায়। একটা
সুযোগ দিবে তোমার পাশে
থেকে তোমাকে অনুসরন
করার।' .
.
শম্মী নিজেও আকাশকে
পছন্দ করতে শুরু করেছিলো
অনেক। কিছুক্ষন অন্য মনষ্ক
হয়েছিলো আকাশের এই
কথাগুলো শুনে। অবশেষে
শম্মী যেই ভেবেছে যে
আকাশকে হ্যা বলেই দিবে।
ঠিক তখনই একটা হাত সোজা
গিয়ে পরে আকাশের গালে।
শম্মী তাকিয়েতো অবাক।
শম্মীর বাবা এসেছে। তিনি
হঠাত কোথা থেকে এলেন।
এসেই আকাশের গালে
থাপ্পর মেরে বললেন ' অসভ্য
ছেলে কোথাকার, মেয়ে
দেখলেই শুধু পিছু নেওয়া।
বাবা মা আদব-কায়দা কিছু
শিখায়নাই। আসলে তোদের
জন্মেরই ঠিক নাই।'
.
হঠাত করে গালে থাপ্পর
খাওয়া তারপর আবার
আকাশের বাবা-মা সম্পর্কে
এইসব উল্টাপাল্টা কথা শুনে
কিছুক্ষনের জন্য আকাশ ভুলেই
যায় তার সামনে শম্মীর
বাবা দাড়িয়ে আছে।
আকাশ রেগে তেরে গিয়ে
সোজা শম্মীর বাবার কলার
ধরে ফেলে। এইদিকে
এতক্ষনে অনেক মানুষ জড় হয়ে
গিয়েছিলো। হঠাত একজন বড়
মানুষের সাথে আকাশের এই
বেয়াদবী দেখে
আশেপাশের সব লোকেরা
আকাশকে ধরে অনেক মারধর
করে। শম্মীর পৃথিবী বলতে
তার বাবাই। জন্মের পরেই
তার মা মারা যায়। তারপর
থেকে তার বাবাই সব তার
কাছে। আর সেদিন আকাশের
তার বাবার সাথে এই রকম
ব্যবহার দেখে আকাশের জন্য
জমিয়ে রাখা সব
ভালোবাসা ঘৃনায় পরিনত
হয় শম্মীর ।
.
ধীরে ধীরে আকাশো
শম্মীকে অনুসরন করা প্রায়ই
বন্ধ করে দেয়। শম্মীও ভুলে
যেতে থাকে ছেলেটার
কথা।
.
অনেকদিন একে অপরের
মুখোমুখী হয় না তারা। তবে
অন্য আরেকদিনের গল্পটাই
শম্মী আর আকাশকে এতোটা
কাছে নিয়ে আশে। .
আকাশ সেদিন বাজার দিয়ে
হেটে যাচ্ছিলো। দুরে এক
জায়গায় অনেক ভীর দেখতে
পায় সে। একটা মেয়ের
চিতকারো শুনা যাচ্ছিলো,
মেয়েটা করে কাদতেছিলো
" কেউ সাহায্য করুন।" আকাশ
দৌড়ে যায় সেখানে ।
যেয়ে দেখ সেই মেয়েটা আর
কেউ না। শম্মী ! শম্মীর
সামনে তার বাবা রক্তাক্ত
অবস্হায় পরেছিলো। শুনলো
একটা মোটর বাইক নাকি
তাকে ধাক্কা মেরে চলে
গেছে। দ্রুত শম্মীর কাছে
গিয়ে আকাশ দারায়। আর
শম্মীর বাবাকে কোলে
উঠিয়ে শম্মীকে বলে
'চিন্তা করো না, আমিতো
আছি। তোমার বাবার কিচ্ছু
হবে না।তুমি আমার সাথেই
আসো' এই বলেই একটা অটো
নিয়ে সোজা হাসপাতালে
যায় শম্মীর বাবাকে নিয়ে
তারা । শম্মীর বাবার শরীর
থেকে প্রচুর রক্ত বেরিয়ে
যায়। অদ্ভুত ভাবেই শম্মীর
বাবার রক্তের গ্রুপ আর
আকাশের রক্তের গ্রুপ একই
ছিলো। তাই আকাশই রক্ত
দেয় শম্মীর বাবাকে।
.
তারপর আর কি হয়েছিলো।
যা হবার তাই। শম্মীর বাবা
সুস্হ্য হওয়ার পর সব কিছু
জানতে পারে । আকাশো
শম্মীর বাবার কাছ থেকে
ক্ষমা চায় । শম্মীর ও আবার
আকাশের প্রতি
ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে
যায়। তারপর থেকে
আকাশের সাথে শম্মীর
বাবারো ভালো সম্পর্ক হয়ে
যায়। আকাশের জন্মের
আগেই তার বাবা মারা
যায়। তাই শম্মীর বাবাকেই
নিজের বাবার মত শ্রদ্ধা
করতো। তারপর থেকে শম্মী
আর আকাশের মধ্যে আর কোন
বাধা আসেনি। এরপর থেকে
এখন পর্যন্ত এমন কোন ভোর
ছিলো না যেদিন শম্মীর ঘুম
আকাশের কলে ভাঙতো না
আর এমন কোন রাত ছিলো না
যে রাতে আকাশ তার সাথে
কথা না বলে ঘুমাতো। এমন
কোন দিন ছিলো না
যেদিনে একবারের জন্য
হলেও আকাশ শম্মীর মুখ
দেখতে আসতো না।
.
.
অতীত থেকে ফিরে আসলো
শম্মী।তবে আজ সেই আকাশই
এতোটা বদলে গেলো কয়েক
দিনে। ভুলে গেলো সব ফেলে
আসা অতীতের গল্প। না
পাওয়ায় থেকে গেলো সে।
ঘরে বসেই এইসব ভাবছিলো
শম্মী। সারারাত ধরে
কান্না করে শম্মী। তারপর
মন থেকে শপথ করলো আর
কখনো আকাশের কথা
ভাববে না। ভুলে যাবে
আকাশকে। অকারনে যারা
ভালোবাসার সম্পর্ক নষ্ট
করে তারা স্বার্থপর।
তাদের কথা ভেবে কষ্ট
পেয়ে লাভ নেই। ভুলার
চেষ্টা করতে থাকে শম্মী
আকাশকে। যদিও আকাশের
খবর আর পায় না সে। সামনে
তার এইচ.এস.সি পরীক্ষা তাই
সব ভুলে নতুন করে লেখাপড়া
আর কঠোর পরিশ্রম করতে
থাকে শম্মী।
.
.
ভালোভাবে লেখাপড়ার পর
ভালো একটা রেজাল্ট করে
শম্মী। একটা সরকারি
মেডিকেল কলেজেও ভর্তি
হতে পারে শম্মী। তার
বাবার অনেক আগের স্বপ্ন
ছিলো শম্মীকে ডাক্তার
বানাবে। সেই স্বপ্নের পথেই
হাটতে থাকে শম্মী।
.
.
. . . . . ৬ বছর পর . . . . .
.
আজ শম্মী অনেক খুশী। কারণ
সে আজ একজন সফল ডাক্তার।
ডক্টরিতে একটা উচ্চ ডিগ্রি
পেয়েছে সে। বড় একটা
হাসপাতালে চাকরীও
পেয়ে যায় সে। আজ তার
আনন্দ সীমাহীন। খুশীতে
নিজের বাসায় পৌছেই
বাবাকে সালাম করে সে।
তার বাবাও অনেক খুশী। আজ
তার স্বপ্ন পুরন হয়েছে।
শম্মীও অনেক খুশী। তবে
ঘরের এক কোনে চুপসে বসে
আছে সে। অনেক পাওয়ার
মাঝেও কোন একটা না
পাওয়া তাকে ঘীরে আছে
আজো। হয়তো এই ৬ বছরেও
ভুলতে পারেনি আকাশকে।
তবে সে জানে না । আজ
কেনো যেনো আকাশের
কথা আরো বেশি মনে পরছে
তার। তার নীরবতা
কাটিয়ে তার বাবা ঘরে
আসলো। এসেই শম্মীকে প্রশ্ন
করে তার বাবা:
-তোর মনে আছে মা? সেই
ছেলেটার কথা। আকাশ।
- আকাশ! নাহ বাবা। আমি
ওকে ভুলে গেছি। (আতকে
উঠে কিছুটা নরম সুরে।)
-মিথ্যা বলিস না। আমি
জানি আজো সে তোর মনে
আছে।
- তুমিতো সবই জানো। কি
করে ভুলবো তাকে। আমিতো
আর আকাশের মতো স্বার্থপর
না।
-মা। জানি কথাটা শোনার
পর হয়তো আমার উপর অনেক
রাগ হবে তোর। তবে এটাই
সত্যি। আকাশ আসলেই অনেক
ভালো একটা ছেলেরে। সে
আজো তোরে অনেক
ভালোবাসে। আর তোরে
ছেরে এতো বছর আছে শুধু
আমার জন্যই।
-মানে??!
.
এরপর শম্মীর বাবা যা বললো
তা শুনে শম্মী পুরোই অবাক।
যাহ শোনার জন্য সে প্রায়
অপ্রস্তুত ছিলো। শম্মীর
বাবা যা বললো:
-আসলে আজ থেকে ৬ বছর
আগে আমিই আকাশকে
বলেছিলাম তোর থেকে দুরে
থাকতে।
তোর মায়ের তোর জন্মের
আগে থেকেই স্বপ্নছিলো যে
আমাদের সন্তান ডাক্তার
হবে। তবে আমি কলেজে
জানতে পারি তুই আর আগের
মতো লেখাপড়ায়
মনোযোগী ছিলি না।
কারনটা জানতাম।
আকাশের জন্যই তোর
লেখাপড়ার এই অবস্হা
ছিলো। তাই আমিই
আকাশের কাছে যাই। আর
তাকে সব কথা খুলে বলি। আর
তাকে অনুরোধ করি যাতে
তোকে ভুলে যায়। ও প্রথমে
মানতে চায় না। পরে বাধ্য
হয়ে আমি ওকে তোর কসম
দেই। যাতে আগামী ৬ বছর ও
তোর আশেপাশেও না আসে।
তাই ও তোর থেকে এতোটা
দুরত্ব বারিয়ে নেয়। আর এর
জন্যই তুই আজ ডাক্তার হতে
পেরেছিস। আকাশকে আমিও
প্রমিজ করেছিলাম। তোকে
শুধু ওর সাথেই বিয়ে দিবো।
শুধু কয়েক বছরের দুরত্ব
বারাতে। তাই আকাশ তোর
থেকে দুরে। আই এম সরি।
আকাশ হয়তো আজো তোর
আশায় বসে আছে।
,
তার বাবার এই কথা গুলো
শুনে শম্মী পুরোই নির্বাক
হয়ে যায়।
দৌড়ে বাবাকে জড়িয়ে
ধরে সে। তার বাবাকে
জিজ্ঞাস করে আকাশ এখন
কোথায়। তার বাবা বলেন
আকাশ যাওয়ার সময় তাকে
শুধু তার বাসার ঠিকানাটা
দিয়ে গিয়েছিলো। হয়তো
আজ সেই বাসাতেই
অপেক্ষার প্রহরে বসে আছে
আকাশ।
.
.
শম্মী আজ অনেক কষ্টের
ভেতরেও অনেক খুশী। কারন
আজ আবার ৬ বছর পর
আকাশের সাথে দেখা হবে
তার। যে ছেলেটা ১টা দিন
শম্মীকে না দেখে থাকতে
পারতো না। সে ৬ বছর একটা
কসমের জন্য কিভাবে দুরে
থাকতে পারে তা শম্মীর
জানা নেই। আজ শম্মী নীল
শাড়ী পড়েছে। এই ৬ বছরে
সে ভুলেই গিয়েছিলো
সাজগোজ কি জিনিস। আজ
সে আকাশের জন্যই হয়তো
এতোটা সাজছে। আকাশকে
দেখার জন্য শম্মীর প্রান
উতলা। . বেরিয়ে পরলো
বাসা থেকে শম্মী । গন্তব্য
আকাশের বাসা। মনে মনে
ভাবতে লাগলো আকাশ
হঠাত এতো বছর পর তাকে
দেখলে কি করবে। হয়তো
এসেই জড়িয়ে ধরে বলবে
'এতোদিন আসিসনি কেন
পাগলী।' বাহ মুখ ঘুরীয়ে
বলবে 'আরেকটু দেরী করতে
পারলিনা। সবতো কয়েকটা
চুল পেকেছিলো।
বাকিগুলোও পাকতো।' এইসব
কথা আনমনে ভেবে নিজেই
লজ্জা পাচ্ছিলো শম্মী।
অবশেষে আকাশের বাসার
সামনে পৌছালো শম্মী।
পৌছেই দৌরে দরজার
সামনে গিয়ে ডাকতে
লাগলো "আকাশ, আকাশ।"
অনেক্ষন ডাকার পর ভেতর
থেকে একজন মোটামোটি
একজন বয়ষ্ক মহিলা বের হয়ে
আশে। হয়তো ইনিই আকাশের
মা। শম্মী সালাম করে তার
মা কে জিজ্ঞাস করে আকাশ
আছে বাড়িতে। আকাশের
মা বেশ কিছুক্ষন শম্মীর
মুখের দিকে তাকিয়ে
থেকে অবশেষে বলে "তুমি
কী শম্মী? আকাশের সাথে
দেখা করতে এসেছো?" শম্মী
অনেক খুশী হয় আকাশের মাও
তাকে চিনে তাই। শম্মী
বলে "জি আন্টি। আকাশকে
একটু ডেকে দেওয়া যাবে।"
আকাশের মা শম্মীকে
দাড়াতে বলে ঘরের ভেতরে
ডুকলো। শম্মীর মন তখন আরো
আকুল আকাশের জন্য। কিছুক্ষন
পর একটা চিঠি হাতে নিয়ে
বের হয়ে আসলেন ঘর থেকে।
চিঠিটা শম্মীর হাতে
দিয়ে শম্মীকে ঘরের
পেছনটায় নিয়ে যান তিনি।
শম্মী সেখানে যা দেখলো
তা দেখে তার শ্বাস বন্ধ
হয়ে গিয়েছিলো প্রায়।
শম্মীকে আকাশের মা একটা
কবরের সামনে নিয়ে
গিয়েছিলো। কবরটা দেখেই
আতকে উঠে শম্মী। আকাশের
মা বলেন, "এই যে আমার
আকাশ। দেখো কতোটা সুন্দর
করে ঘুমিয়ে আছে।
আকাশকে ডাক দিওনা মা।
ওকে ঘুমাতে দাও।" শম্মী
পুরোই নির্বাক হয়ে যায়।
তার শ্বাস-প্রশ্বাস ও
কিছুক্ষনের জন্য আটকে যায়।
হৃদকম্পনো হয়তো থেমে
আসছিলো। এই রকম একটা
দৃশ্যের জন্য শম্মী মোটেও
প্রস্তুত ছিলো না। কবরের
দিকে অনেক্ষন অপলক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার
পর ভয়ে ভয়ে চিঠিটা খুললো
সে। চিঠিটে যা লিখা
ছিলো,
.
.
প্রিয় শম্মী,
প্রথমেই তোমাকে অনেক
অভিনন্দন যে তুমি একটা
ডাক্তার হয়েছো। আজ কত
তারিখে তুমি আমার
চিঠিটা পড়ছো আমার
জানা নেই। তবে যেহেতু
আমার চিঠিটা পড়ছো তাই
হয়তো আমাদের দুরত্বের ৬
বছর হয়ে গেছে আজ। হয়তো
ভাবছিলে যে ছেলেটা
তোমায় ছেরে ১ দিনো
থাকতে পারতো না সে
এতোদিন কিভাবে রয়েছে।
আসলে তুমি হয়তো ভাবছো
তোমার বাবা আমায় কসম
দিয়েছে তাই। তবে ঘটনা
অন্য একটা রয়েছে। সেদিন
আমি বাড়িতে পড়ছিলাম।
হঠাত করে খুব অসুস্হ্য হয়ে
পরি আর অজ্ঞান হয়ে যাই।
পরে ডাক্তারখানায় নিয়ে
জাওয়া হয় আমাকে। আমার
মা রোজ আমায় দেখে
কাঁদতো। কারনটা মা না
বললেও আমি জানতে পারি।
আমার নাকি ব্রেইন
টিউমার। কোনভাবেই
চিকিতসা করে তা সুস্হ্য
করা সম্ভব না। ডাক্তার
বলেছিলো আমি নাকি আর
সর্বোচ্চ ৬ মাস বাঁচবো।
জানি না সৃষ্টিকর্তা আমার
সাথে কেনো এমন করলো।
হয়তো একটু বেশিই
ভালোবাসে আমায়।
ভাবছিলাম এই কথাগুলো
তোমায় কিভাবে বলি। পরে
ভাবলাম তোমায় বলে কষ্ট
দিয়ে দুরত্ব বারিয়ে কি
লাভ। মিত্যুর আগে পর্যন্ত
তোমার সাথেই থাকবো| ।
কিন্তু হয়তো আমার জীবনে
না পাওয়া জিনিসটাই তুমি
ছিলে। সেইদিন বিকেলে
তোমার বাবা আমার সাথে
দেখা করতে আসেন।
আমাকে সব কথা খুলে বলেন।
তোমার বাবা তোমার
মাকে অনেক পছন্দ করতেন ও
ভালোবাসতেন। তাই তার
শেষ ইচ্ছা পুরোনের জন্যই
তিনি আমাকে তোমার
থেকে দুরত্ব বারিয়ে
নেওয়ার অনুরোধ করেন।
তোমার বাবাকে আমি
নিজের বাবারমত দেখতাম।
আর তিনিই যখন নিজের
মেয়েকেই আমার কাছ
থেকে চাচ্ছিলো তখন আরো
অবাক হলাম আর নিজেকে
করুন মনে হলো । তাকেও
বলিনী যে আমার ব্রেইন
টিউমার। হয়তো সবাই
আমাদের ভালোই চায়।
তোমার বাবা বলেছিলো
শম্মী শুধু আকাশের। কিন্তু
আজ কিছুই সম্ভব না। হয়তো
তুমি যখন এই চিঠিটা পড়ছো
তখন আমার কবরের সামনে
দাড়িয়ে আছো, এতক্ষনে
আমার দেহ হয়তো মাটির
অন্তরালে নিহিত হয়ে
গেছে হারগুলোই বেঁচে আছে
শুধু। এই ৬ বছরে অনেক
বকেছো হয়তো আমায়। আর
এখন আমার কথা ভেবে হয়তো
কাঁদছো। তবে এখন আমায়
ভুলতে হয়তো একটু কষ্ট কম
হবে। ভালো থেকো । আর
আমাকে ভুলে নতুন ভাবে
জীবন শুরু করো। আর ভালো
একটা ডাক্তার হবা। দেশের
মানুষকে ফ্রিতে
ট্রিটম্যান্ট দিবা। আর
পারলে আমার মত আকাশদের
একটু বাঁচিয়ে রাখার মত
হাসপাতাল বানিয়ো।
ভালো থাকো তুমি।
ভালোবাসা দিও তোমার
বাবাকে। আর আমার মায়ের
দিকে একটু নজর রেখো।
ভালোবাসতাম ,
ভালোবাসি ,
ভালোবাসবো। .ইতি,তোমার
না পাওয়াআকাশ ।..শম্মী
চিঠিটা পড়েই মাটিতে
লুটিয়ে পরে। জ্ঞানী
মানুষেরা বলে মানুষ পানি
ছারা ৪ দিন পর্যন্ত বাঁচতে
পারে অক্সিজেন ছারা ৪
মিনিট, তবে আশা ছারা ৪
সেকেন্ডও বাঁচতে পারে
না। শম্মী ব্রেইন স্টক করে।
তারপর অনেকদিন বেঁচে
ছিলো। দীর্ঘ ৬ দিন
আই.ছি.ইউ তে থাকার পর
আকাশের বাড়িতে পাড়ি
জমায়। শম্মীর মৃত্যুর পরের
দিনই শম্মীর মার কাছে চলে
যায় তার বাবা। ওপারে।
আকাশের মা হয়তো
এতোদিন বেঁচে ছিলো
ছেলেটার শেষ ইচ্ছা পুরনের
জন্যই। শম্মী চিঠিটা দিয়ে
নিজেও চলে যায় না
পাওয়ার দেশে।.গল্পটা
হয়তো এখানেই শেষ। গল্পটার
নাম অপ্রাপ্তী দিলেও
হয়তো কিছু ভুল হতো না। না
পাওয়ায় থেকে গেলো
শম্মীর আশা, না পাওয়ায়
থেকে গেলো আকাশের
ভালোবাসা, না পাওয়ায়ই
থেকে গেলো শম্মীর বাবা-
মায়ের স্বপ্ন।
.
.
【 এটি একটি না পাওয়ার
গল্প। গল্পটা হয়তো অপূর্ন।
তবে এখানেই এর সমাপ্তি।】
0 Response to "অসমাপ্ত প্রেম"
Post a Comment